এ মাসেই বসছে দ্বিতীয় স্প্যান
২০১৯ সালেই ডানা মেলবে স্বপ্নের মেট্রোরেল
প্রকাশিত : ১৮:৪২, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৪৮, ৭ মে ২০১৮
প্রতিকী ছবি
রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং যানজট নিরসনে লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত স্থানে মাটির গভীরে ৪০ মিটার পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি চলছে অবিরাম পাইলিংয়ের কাজ। সেই সঙ্গে ডিপো ও স্টেশন নির্মাণের কাজও চলছে বেশ জোরেশোরে। ইতোমধ্যে উত্তরা দিয়াবাড়ি বসানো হয়েছে প্রথম স্প্যান। এমাসেই রাজধানী শেরে বাংলা নগর কৃষিবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে বসবে দ্বিতীয় স্প্যান। আগামী বছরের ডিসেম্বরের আগেই মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে এমন আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা দিয়াবাড়ির, খিলক্ষেত, বনানী, মিরপুর-১০, ১১, ১২, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁওয়ের সড়কজুড়ে অবিরত চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। উত্তরা দিয়াবাড়িতে এখন চলছে প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, ট্রেন শেডসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় চলছে চেক বোরিং ও টেস্ট পাইলের কাজ। এদিকে আগারগাঁও এলাকায় প্রকল্পের পাইলিংয়ের জন্য বিশাল আকৃতির ক্রেন, এসকাভেটর বসানো হয়েছে। খননের সময় যেসব মাটি নিচ থেকে তোলা হচ্ছে সেগুলো বক্সে করে উত্তরায় একটি ডাম্পিং সাইটে নিয়ে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্ঘটনা এড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হচ্ছে ‘হার্ড ব্যারিয়ার’। এর উপরে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয় জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ শাহজাহান একুশে টিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ১৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রতিদিনই কাজের অগ্রগতি বাড়ছে। যেভাবে কাজ চলছে আশা করি নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই কাজ শেষ হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রতিঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী উভয় দিক থেকে আসা যাওয়া করতে পারবে মেট্রোরেলে। এছাড়া জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি-মিৎসুবিশি থেকে কোচ আমদানি করা হবে। বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে দুটি প্ল্যান্টও নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থানা পরিচালক এম এ সিদ্দিক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম প্যাকেজের কাজ নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস আগেই শেষ হয়েছে। এখন চলছে দ্বিতীয় প্যাকেজের কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মেট্রোরেল দৃশ্যমান হবে। যথাসময়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়েও আশাবাদী মন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও পর্যন্ত এরপর ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত শেষ হবে। ঢাকায় আরও দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১ এবং ৫-এর জন্য জাপান সরকার অর্থ বরাদ্দ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। লোন চুক্তি হয়ে গেছে। ওই দুটি মেট্রোরেলের বড় অংশ আন্ডারগ্রাউন্ড হবে।
মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে চলমান প্রকল্পটি। চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেল স্টেশন। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘র্যাপিড পাস’ কার্ড দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকেট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুত গতিসম্পন্ন এ ট্রেন।
চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো যাবে : সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাস্তার মাঝ বরাবর উড়াল পথের (ভায়াডাক্ট) ওপর স্থাপিত ডাবল রেললাইন থাকবে। ছয় মিটার চওড়া এই উড়ালপথে উভয়দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রাস্তার ওপর ঝুলন্ত স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, দৈর্ঘ্য হবে ১৭০ মিটার। নিচতলায় হবে টিকেট কাউন্টার ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবেন। ইলেক্ট্রিক ট্রেন চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর ট্রেন স্টেশনে থামবে। সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি মেট্রোরেল।
২৮ জোড়া ট্রেন চলবে : পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবার পর মোট ২৮ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে রাজধানীতে। রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। প্রতি মেট্রোরেলে ৬টি কোচ থাকবে। প্রতি স্কয়ার মিটারে ৮ জনের হিসাবে ব্যস্ততম সময়ে ১ হাজার ৮০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে; যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকাই দেবে জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। তবে এ সুবিধার যাত্রা শুরু হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে দুই বছরের বেশি সময়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের একটি অংশের যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে।
প্রথম প্রকল্পের রুট: মেট্রোরেল লাইন-৬-এর রুট এলাইনমেন্ট হলো উত্তরা তৃতীয় পর্ব-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁ-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েলচত্বর-প্রেসক্লাব-বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। ১৬টি স্টেশন হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, দক্ষিণ পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।
মেট্রোরেলের কাজের অগ্রগতি ভিডিও দেখুন নিচের লিংকে