২৮ বিয়ের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী স্বর্ণা
প্রকাশিত : ১৮:৪৩, ২ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৮:৫৭, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। স্বামী কামরুল হাসান জুয়েলের করা মামলায় গ্রেফতারের পর সে সময় গণমাধ্যমে যা এসেছিল, প্রকৃত ঘটনা তার পুরোপুরি উল্টো বলে দাবি করেছেন এ অভিনেত্রী।
রোমানা ইসলাম স্বর্ণা জানান, স্বামী তার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ের অপপ্রচার চালিয়েছেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এসব অভিযোগের প্রমাণ আজও দিতে পারেননি বলে দবি করেন এই অভিনেত্রী।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের সহযোগিতায় সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসান জুয়েলের দায়ের করা মামলায় অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার কারাভোগের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণা বলেন, স্বামী জুয়েলের কথা না শোনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের প্রভাব খাটিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছিল।
তিনি বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে জুয়েলের সঙ্গে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে বিয়ে হয়। আমার ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন বিয়ে করি কামরুল হাসান জুয়েলকে। তবে বিয়ের পরই পারিবারিক দ্বন্দ্ব একপর্যায়ে গড়ায় মামলা-মোকদ্দমায়। আমাকে মিথ্যা বলে জুয়েল বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার আগের বউয়ের কথা গোপন রেখে বিয়ে করেন। এসব জানার পরই বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি ও নির্যাতন। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘর না করার সিদ্ধান্ত নিই।
‘নির্যাতনের জন্য কয়েকবার সাধারণ ডায়েরি করেও লাভ হয়নি। বিয়ের আগে বলেছিলেন অভিনয় করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিয়ের পর দেখা যায় উল্টো চিত্র। আমাকে অভিনয় করতে দেননি।’
স্বর্ণা বলেন, বিয়ের পর মায়ের বাসায় থাকতাম। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে শুটিং থেকে অপহরণ করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। দুবার তাকে ডিভোর্স দিই। শেষ পর্যন্ত আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ডিভোর্স তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে এমন শর্তও দেওয়া হয়।
এই অভিনেত্রী অভিযোগ করে বলেন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন জুয়েলের অপকর্মে সহযোগিতা করতেন। তাই উপায় না থাকায় একপর্যায়ে সমঝোতা করি। মামলা তুলে নেন জুয়েল। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডিভোর্স দিলে আমাকে আটকানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেন। আমি যেন অভিনয় করতে না পারি, কাউকে মুখ দেখাতে না পারি।
গ্রেফতার করার জন্য জুয়েল ডিবি হারুনকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিলেন দাবি করে স্বর্ণা বলেন, দেড় মাস জেলে থাকার পর ডিভোর্স দিতে পারবো না সেই শর্তে জামিন করায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে এই শর্তে রাজি হই। ডিভোর্স চলাকালীন ভয়ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকতেন জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখেন আর সন্তান-পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। পরিবারের কথা ভেবে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যান। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছি জেনে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেন। দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদেরও হুমকি দেন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।
স্বামীর ক্ষমতার বিষয়ে অভিনেত্রী স্বর্ণা বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও ডিবির হারুন জুয়েলকে সহযোগিতা করতেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করতেন। যখন সম্পর্ক ভালো ছিল তখন আমাকে এসব কথা বলতেন। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাতেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করতেন। বিনিময়ে পেতেন মোটা অঙ্কের অর্থ।
স্বর্ণা বলেন, জুয়েল মূলত হুন্ডি কারবারে জড়িত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবিপ্রধান হারুনের টাকা বিদেশে পাচার হতো জুয়েলের মাধ্যমে। জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেননি। আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমাকে সম্মানহানি করার জন্যই এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়। বিভিন্ন সময় সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন জুয়েলের পক্ষ নিয়ে হুমকি দিয়ে হয়রানি করতো। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয়নি। যে কারণে সবকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিল। অপরাধ না করেও অপরাধী হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, জুয়েল অর্থপাচারের পাশাপাশি জমি দখল করে দিতেন এবং দখল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিতেন। জুয়েল আমাকে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলার জন্য বাসায় আনা এবং তা নিয়ে বাধা প্রদান করলে আমার ওপর অমানবিক অত্যাচার হতো।
আওয়ামী সন্ত্রাসী দ্বারা জুয়েলের ভাইয়ের নির্বাচনে হত্যা মামলাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যও আমাকে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
তিনি বলেন, জুয়েল ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে ছাত্র আন্দোলন ধ্বংসের জন্য অর্থ লগ্নি করেন এবং আমার দেওয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে আমাকে ও আমার পরিবারকে অনবরত হুমকি দিতেন। বলতেন, সবাইকে হত্যা করে গুম করবে, লাশও পাওয়া যাবে না। সর্বশেষ জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্নভাবে হুমতি দিয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রমাণও তার কাছে আছে বলে দাবি করেন এই অভিনেত্রী।
স্বর্ণা বলেন, নানাভাবে হুমকি দিতেন, তাই এতদিন কিছু বলতে পারিনি। সরকার পতনের পর দেশে এসেও কিছুদিন অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে কথা বলিনি। এখনো কোনো মামলা করিনি। তবে শিগগির এ বিষয়ে সবাই জানতে পারবে।
এমবি