২৮০ শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দিলো পাচারকারীরা!
প্রকাশিত : ১৭:২৯, ১১ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২২:২০, ১১ আগস্ট ২০১৭
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ২৮০ জন ইথিওপিয়ান শরণার্থীকে আরব সাগরে ছুড়ে দিয়েছে পাচারকারীরা। এদের মধ্যে ২১০ জন সমুদ্র থেকে উঠে আসতে সমর্থ হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। আর নিখোঁজ রয়েছেন ৩৫ জন। এ মর্মান্তিক খবর দিয়েছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
বুধবার ১২০ জনকে সাগরে নিক্ষেপের পর বৃহস্পতিবার আবারও ১৬০ জনকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয় বলে জানায় ইউএনএইচসিআর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা। বুধবারের ছুড়ে দেওয়া ১২০ জনের মধ্যে ৬৯ জন প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন। আর বৃহস্পতিবার ১৬০ জনের মধ্যে ১৪১ জন নিজেদের প্রাণরক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি ১৯ জনের মধ্যে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানায়, দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছেন তারা। এখনও নিখোঁজ ১৩ জন। সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠে আসা এমন ৫৭ জনকে চিকিৎসাসেবা ও খাবার সরবরাহ করছে জাতিসংঘ। পালিয়ে গেছেন ৮৪ জন অভিবাসী।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফ্রিকার সোমালিয়া-ইথোপিয়া-সুদান। ভাগ্য গড়ার লক্ষ্যে এসব দেশ থেকে তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে ইয়েমেন নৌ-পথের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট। যুদ্ধকবলিত হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার অভিবাসী সেই পথ ব্যবহার করেই পাড়ি জমান ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে।
ইউএনএইচসিআরের দাবি, ১৬০ জন ইথিওপিয়ান অভিবাসীকে জোর করে আরব সাগরে এক নৌকায় তুলে দেওয়া হয়।
সংস্থাটির ইয়েমন প্রধান লরেন্ত দে বোক এটাকে খুবই মর্মান্তিক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, অভিবাসন প্রত্যাশীরা পাচারকারীদের সঙ্গে নৌকায় ছিল। কিন্তু ডাঙায় পৌঁছানোর আগেই তাদের নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকজন হারিয়ে যায়। আর বাকিদের কবর দেন বেঁচে যাওয়ারা।
বেঁচে গেলেও এ রকম নির্মমতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকে।
দে বোক আল-জাজিরাকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতি নতুন। প্রথমবার আমরা এমন অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলছি যাদের জোর করে নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের কারণেই পাচারকারী চক্ররা এতটা উগ্র হওয়ার সাহস পেয়েছে। আর এ কারণেই দুর্ভোগ নেমে এসেছে শরণার্থীদের। জিবুতি, ইখিওপিয়া ও সোমালিয়ার পাচারকারীরা ইয়েমেনের পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। হর্ন অফ আফ্রিকা ও ইয়েমেনের এই সরু সাগরপথকেই ব্যবহার করছে তারা। এদিক দিয়েই ধণী আরব দেশগুলোকে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে হাজার হাজার মানুষ।
ইউএনএইচসিআরের প্রধান উইলিয়াম লেসি সুইং বলেন, বর্তমানে পৃথিবীতে আসলে কিছুই ঠিক নেই। যেখানে অসংখ্য শিশুকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হচ্ছে সেখানে কিছুই ঠিক থাকতে পারে না।
অভিবাসীন প্রত্যাশীদের এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকা থেকে ইয়েমেনের রুট খুবই বিপজ্জনক।
ইয়েমেনে শরণার্থীরা যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে সুদান, মিসর ও লিবিয়াতেও পালিয়ে গেছেন। গত বছর ১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ এরও বেশি অভিবাসী ইয়েমেন উপকূলে আসে। এর আগের বছরও আসে ১ লাখের বেশি। এবছরও প্রায় ৫৫ হাজার অভিবাসী ইয়েমেনে আসে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা।
এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব এর মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। তিনি বলেন, আমাদের আরও বৈধ পথ তৈরি করতে হবে এবং সহজ করতে হবে।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন