ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

৫৫ বছরের জীবনের ১৩ বছরই কারাগারে বন্দি (ভিডিও)

আদিত্য মামুন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৬, ৪ মার্চ ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

৫৫ বছরের জীবন। ১৩ বছরই থাকলেন কারাগারের অন্ধকারে। স্বাধীনতা সংগ্রামে এমন ত্যাগ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ছাড়া পৃথিবীতে আর কারও নেই। জীবনের বাঁকে বাঁকে যিনি সহ্য করেছেন নিঃসীম অত্যাচার আর নির্যাতন। তবু হাল ছাড়েননি বঙ্গবন্ধু। 

শত বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে অজস্র মণিষীর শ্রমে-ঘামে বাঙলার স্বকীয়-স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি আর ঔদার্যের বন্ধনে চিরায়ত এক ইতিহাস। কিন্তু এতো এতো মণীষীর মধ্যে পলি-মাটি বিধৌত এই জনপদের স্বাধীনতার ইতিহাসে যাঁর নাম এপিটাফ হয়ে শোভা পাচ্ছে তিনি বাঙালির প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

ক্ষণজন্মা এই প্রবাদ পুরুষের বুকজুড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র। যিনি ব্রিটিশ শাসনামলে মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথম কারাভোগ করেছিলেন। শাসকগোষ্ঠির জুলুম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে অগ্নি উচ্চারণের মন্ত্র ছিল তাঁর কণ্ঠে। 

পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণে ৪ হাজার ৬শ’ ৭৫ দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কেটেছে তাঁর। 

২৫ মার্চের কালরাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখে হানাদাররা। পরে হাজার মাইল দূরে কুখ্যাত লায়ালপুর কারাগারে রাখে বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তান চেয়েছিল বাঙালির মুক্তি আন্দোলনকে নাবিকবিহীন হালভাঙ্গা নৌকায় পরিণত করতে। 

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক কর্ণেল (অব:) সাজ্জাদ জহির বীরপ্রতীক বলেন, “ওঠার সিঁড়ির দরজাটা ভেঙে ফেললো, গুলি করতে করতে আসছে বঙ্গবন্ধু অসম সাহসী ব্যক্তি লুকিয়ে থাকলেন না। পায়জা-পাঞ্জাবি পড়া ছিলেন, তাড়াতাড়ি নেমে আসলেন। তাঁকে দেখে তারা থমকে গেল। কমান্ডো কায়দায় ঘেরাও করে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো।” 
 
লায়ালপুর কিংবা মিয়ানওয়ালি জেলে মুজিবের সঙ্গে ইয়াহিয়ার জেল কর্তৃপক্ষের আচরণ ছিল যারপরনাই নিষ্পেষণের। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে একাধিকবার কবর খুঁড়েছিল কারা প্রশাসন।   

কর্ণেল (অব:) সাজ্জাদ জহির বীরপ্রতীক বলেন, “সেখানে ডেপুটি সুপার খোদাদাত খান ১০ জন কয়েদি নিয়ে আসলেন এবং দেখিয়ে দিলেন গর্ত করার জন্য। তারা সুন্দর করে একটা কবর খুঁড়লো। বঙ্গবন্ধু তাকিয়ে দেখছেন।  সেই সঙ্গে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয় ফাঁসিতে ঝুলানোর চিহ্ন। মানসিকতা দুর্বল করার জন্য এগুলো করা কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো এতো ভীত মানুষ নন।”

মুজিবকে কলঙ্কিত করতে পাকিস্তানের মিত্রদেশ ইরান তাঁর কারাজীবন নিয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপে সেখানকার সংবাদপত্র কায়হান ইন্টারন্যাশনালে। সাংবাদিক আমির তাহিরি তার পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনে বাঙালির মহানায়ক মুজিবকে দেখাতে চেষ্টা করেছিল পাগল হিসেবে। বৈশ্বিক এই দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে ছিল চীন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।   

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আরও বলেন, “লায়ালপুর জেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ব্যারিস্টার একে বদি। বললেন, আপনাকে কোর্ট মার্শালে বিচার করা হবে, সেই বিচারে আপনি কি ডিফেন্স ল’ইয়ার দেওয়া হবে। তিনি বললেন, আমি মার্শাল কোর্ট মানি না, এটা অবৈধ কোর্ট “

১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর কোর্ট মার্শালে ফাঁসি হয় বাংলার মুক্তি আন্দোলনের দূত মুজিবের। যদিও মুজিবের জীবনরক্ষায় জাতিসংঘ, জেনেভার জুরিস্ট কমিশন, ভারত, রাশিয়াসহ ২৪টি দেশের কণ্ঠ ছিল সোচ্চার।  

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আত্মসর্মপণ করে। পাকিমুক্ত বাংলা হয় পাকপবিত্র। পাকিস্তান কারাগার থেকে ব্রিটেন গলিয়ে পরিশেষে ভারতে যান বঙ্গবন্ধু। অতপর বীরোচিত সংবর্ধনায় বাংলার বীর ফেরেন স্বদেশে- মহানায়কের মহান মাটিতে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি