৬ বিষয় রোযার পূর্ণতা আনে
প্রকাশিত : ১৮:২৮, ২ মে ২০১৮ | আপডেট: ১০:০৪, ১০ জুন ২০১৮
সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের রোজা অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে গোনাহের কাছ থেকে ফিরিয়ে রাখার মাধ্যমে অর্জিত হয়। ছয়টি বিষয় দ্বারা এ রোজা পূ্র্ণতা লাভ করে।
১। দৃষ্টি নত রাখা: মন্দ বিষয় সমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত না করা এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয় এমন বিষয় হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, মন্দ বিষয়ের ওপর দৃষ্টিপাত করা শয়তানের একটি বিষ মিশ্রিত তীর। আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যে এটা বর্জন করে, আল্লাহ তাকে এমন ইমান দান করেন, যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করে। হযরত জাবের (রাঃ) রসূলে কারীম (সা) থেকে রেওয়ায়েত করেন, ৫টি বিষয় রোযাদারের রোযা নষ্ট করে দেয়- মিথ্যা বলা, কুটনামি করা,পশ্চাদনিন্দা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া ও কামভাব সহকারে দৃষ্টিপাত করা।
অনর্থক কথাবার্তা, মিথ্যা, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, জুলুম কলহ, বিবাদ ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে রসনা সংযত রাখা।
সাধ্যমত নিরবতা পালন করা এবং যিকির তেলওয়াতে ব্যপৃত থাকা এটা জিহ্বার রোজা।
সুফিয়ান সওরী বলেন, পরনিন্দা রোযাকে বিনষ্ট করে। হযরত মোজাহিদ থেকে বর্ণিত আছে- দুটি অভ্যাস রোজা নষ্ট করে পরনিন্দা ও মিথ্যা।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, রোযা ঢাল। তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রোযা রাখে, তখন সে যেন মূর্খোচিত ও অশ্লীল কথা না বলে। কেউ তার সাথে ঝগড়া করলে অথবা গালি দিলে সে যেন বলে দেয়- আমি রোযাদার।
৩। কুকথা শ্রবণ থেকে কর্ণকে দূরে রাখা। কেননা, যেসব কথা বলা হারাম সেগুলো শ্রবণও হারাম। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা শ্রবণকারী এবং হারাম ভক্ষণকারীকে পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে-
তারা মিথ্যা শ্রবণকারী ও হারাম ভক্ষণকারী।
আরও বলা হয়েছে, তাদের দরবেশ ও আলেমগণ তাদেরকে গোনাহের কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না কেন?
সুতরাং পরনিন্দা শুনে চুপ থাকা হারাম। আল্লাহ বলেন, (তখন তোমরাও তাদের মতো) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, গীবতকারী ও শ্রবণকারী উভয়েই গোনাহে শরীক।
৪. হাত পা এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে খারাপ বিষয় থেকে এবং ইফতারের সময় পেটকে সন্দেহযুক্ত খাদ্য হতে বিরত রাখা। কেননা, যদি কেউ সারাদিন হালাল থেকে বিরত থাকে এবং হারাম দ্বারা ইফতার করে, তবে তার রোযা কিছুই হয়না।
৫. ইফতারে হালাল খাদ্য এতো বেশি খেতে নেই যাতে পেট স্ফীত হয়ে যায়। কেননা, আল্লাহর কাছে হালাল খাদ্য দ্বারা পরিপূর্ণ পেটের চেয়ে অধিক মন্দ পাত্র আর একটিও নেই। এছাড়া সারা দিনের ক্ষুধা ও পিপাসার ক্ষতি ইফতারের সময় পূরণ করে নেওয়া হলে মানুষ রোযা দ্বারা শয়তানকে কিরূপে দাবিয়ে রাখবে এবং কামভাবকে কিভাবে চূর্ণ করবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোযার মধ্যে নানা প্রকারের খাদ্যের আয়োজন হয়ে থাকে। সেমতে মানুষের অভ্যাস এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা রমজান মাসের জন্য সব খাদ্য গুছিয়ে রাখে এবং রমযানে এত বেশি খায়, যা অন্য সময় কয়েক মাসেও খায়না। বলাবাহুল্য, রোযার উদ্দেশ্য পেট খালি রাখা এবং কামনা-বাসনাকে চূর্ণ করা, যাতে তাকওয়া শক্তিশালী হয়। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উদরকে অভুক্ত রাখার পর যখন খাদ্যস্পৃহা অনেক বেড়ে যায়, তখন পেট পুরে ও তৃপ্তি সহকারে সুস্বাদু খাদ্য খেলে নফসের আনন্দ শক্তি আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।
৬. ইফতারের পর মনে একাধারে আশা ও ভয় এবং সন্দেহ থাকা। কেননা, একথা কারও জানা নেই যে, রোযাদারের রোযা কবুল হয়েছে কিনা এবং সে নৈকট্যশীলদের অন্তর্ভূত হয়েছে কিনা। প্রত্যেক এবাদত শেষে এমনি ধরনের অবস্থা থাকা ভাল। বর্ণিত আছে, হযরত হাসান বসরী ঈদের দিন একদল রোকের কাছ দিয়ে গমন করলেন, যারা তখন হাস্য রস ছিল। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা রমযান মাসকে দৌঁড়ের মাঠ করেছেন, যাতে সকল মানুষ তার আনুগত্যের জন্যে মাঠে দৌড় দেয়। কিছু লোক তো অগ্রসর হয়ে মনজিলে মকছুদে পৌঁছে গেছে। আর কিছু লোক পেছনে থেকে নিরাশ হয়েছে। যেদিন আগ্রগামীরা তাদের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছেছে এবং বাতিল পন্থিরা বঞ্চিত রয়েছে, সেদিন যারা হাসি তামসা করে, তাদের প্রতি বিস্ময় লাগে। আল্লহার কসম, প্রকৃত পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলা হলে মকবুল ব্যক্তিরা আনন্দের আতিশয্যে হাস্য, রসিকতা থেকে বিরত থাকবে। আহনাফ ইবনে কায়স (রাঃ) কে কেউ বলল, আপনি বুড়ো মানুষ। রোযা আপনাকে দুর্বল করে দেয়। এ জন্যে কোন উপায় করা আপনার জন্যে মঙ্গল জনক। তিনি বললেন, আমি একটি দীর্ঘ সফরের জন্যে রোযাকে প্রস্তুত করছি। আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে সরব করা তাঁর আযাবে সবর করার তুলনায় অনেক সহজ। এ পর্যন্ত রোযার ছয়টি আভ্যন্তরীণ বিষয় বর্ণিত হল। এবং এমন সব কুবাসনা জাগ্রত হয় যা রমযান মাস না হলে হয়তো জাগ্রত হতোনা। মোটকথা যেসব শক্তি মানুষকে মন্দ কাজে টেনে নেওয়ার উসিলা এবং শয়তানের হাতিয়ার সেগুলোকে দূর্বল করাই রোযার উদ্দেশ্য। এটা অল্প ভক্ষণ দ্বারা অর্জিত হয়না। এটা অল্প ভক্ষণ ছাড়া অর্জিত হয়না।
# ইমাম গাযযালি (রহঃ) এহইয়াউ উলুমিদ্দিন বই থেকে সংগৃহীত
টিকে