৬ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন সাড়ে ২৭ শতাংশ
প্রকাশিত : ১৫:১২, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
চলতি অর্থবছরে ঘোষিত মোট বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জুলাই-ডিসেম্বরে অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। এরই মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৯৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাজেট বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে । তিনি জানান, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমছে, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গড়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে যা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম অর্থবছরে আমরা ব্যাপক প্রত্যাশা ও বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছি।
বছরের প্রথমার্ধের অগ্রগতিতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের গতিপথ সঠিক ধারায় রয়েছে।
বিবেচ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকগুলোর ইতিবাচক অবস্থা,
বিশেষ করে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রফতানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বেসরকারি ঋণপ্রবাহের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ও মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি নির্দেশ করছে, উন্নয়নের মহাসড়কের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা । সামনের দিনগুলোয় আমাদের অন্যতম কৌশল হবে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, বহুমুখীকরণের মাধ্যমে গুণগত ও মানসম্পন্ন রফতানি পণ্য উৎপাদন, বিদ্যমান বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার অন্বেষণ।
প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলোর সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিবিএসের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এ-যাবত্কালের রেকর্ড। জিডিপিতে এ প্রবৃদ্ধি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে, যা আগের তিন অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি ছিল। এছাড়া হবে ১ হাজার ৯০৯ ডলার মাথাপিছু জাতীয় আয় ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এনবিআরের কর রাজস্ব আয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে বলে বাজেট বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রফতানি আয় ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশে। ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ আমদানি ঋণপত্র খোলার হার হ্রাস পেয়েছে । গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ বিলিয়ন ডলারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে । এছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন