ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

৬১ শতাংশ খাবারে অনিরাপদ লবণ, বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি (ভিডিও)

শিউলি শবনম, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৬, ৩১ অক্টোবর ২০২২

দেশে প্রক্রিয়াজাত করা অন্তত ৬১ শতাংশ খাবারেই মিলছে অনিরাপদ মাত্রার লবণ। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ খাবারে মিলেছে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ লবণের অস্তিত্ব। অথচ দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই নিয়মিত এসব খাবার গ্রহণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিসহ নানান রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। নীতিমালা না থাকায় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকে না বলছে বিএসটিআই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী একজন মানুষ খাবারের মাধ্যমে দিনে ৫ গ্রাম বা এক চা চামচ পর্যন্ত লবণ খেতে পারেন। আর প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে লবণের নিরাপদ মাত্রা ধরা হয় ৭৫০ মিলিগ্রাম। কিন্তু দেশের নামীদামি অধিকাংশ কোম্পানির মোড়কজাত খাবারে লবণের মাত্রা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। আবার ৪৪ শতাংশ মোড়কে উল্লেখ করা পরিমাণের চেয়ে পাওয়া গেছে বেশি লবণ। 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রক্রিয়াজাত করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৬১ শতাংশ বিস্কুট, নুডলস, চানাচুর, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়িতে মিলেছে অতি উচ্চমাত্রার লবণ।

এছাড়া ডাল-বুট ভাজা, কেক, কোমল পানীয়, ফ্রুট জুস কোনোটিতেই পাওয়া যায়নি নির্ধারিত মাত্রার লবণ। আর দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ সপ্তাহে ১৫ বার বা দিনে ২ বারের বেশি খাচ্ছে এসব খাবার।

লবণ ব্যবহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় লবণ গ্রহণের ফলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. সোহেল রেজা বলেন, “দিনে অন্তত তিনবার করে এক একটা বাচ্চা কোনো না কোনো প্রসেস ফুড খাচ্ছে। তাতে কি পরিমাণ সে লবণ শরীরে নিচ্ছে। এটা যদি ছোটবেলায় ক্রমাগত চলতেই থাকে তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগবে। সরকারের একটা নীতিমালা করা উচিত, যেখান থেকে প্রত্যেকটা প্রসেস ফুডে লবণ কতটুকু থাকতে পারবে সেটা লিখে দেওয়া।”

২০১৭ সালে প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইনে লবণের পরিমাণ উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানতে দেখা যায়নি বেশিরভাগ কোম্পানিকে। অথচ এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন খাদ্যের মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। 

বিএসটিআই উপ-পরিচালক (কৃষি ও খাদ্য) এনামুল হক বলেন, “রিকোয়্যারমেন্ট টেবিলে ১২ থেকে ১৫টি সেট করা আছে। সেটার মধ্যে যদি লবণটা না থাকে তাহলে পরীক্ষাগারে এই টেস্টটা হচ্ছে না। কোনো প্রডাক্টে লবণ বা চিনি বেশি থাকলেও তাকে খারাপ বলতে পারছি না। যদি সরকারের কোনো নীতিমালা থাকতো যে, নির্দিষ্ট পরিমাণের উপর চিনি ও লবণ থাকা যাবে না। সেক্ষেত্রে আইনের আওতায় আনা যেত।”

তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, নীতিমালা প্রণয়নের দরকার নাই। বিএসটিআইয়ের সঠিক তদারকির মাধ্যমেই প্রক্রিয়াজাত খাবারের স্বাস্থ্যকর মান ফেরানো যাবে। 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আলীম বলেন, “এটার জন্য নতুন করে নীতিমালা লাগবে না। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইন আছে সেই আইনেই করা যাবে। যখন বেশি দিবেন বা কম দিবেন তখনই আইনের আওতায় বিএসটিআই শাস্তি দিতে পারবে।”

ভোক্তাদের খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে উন্নত বিশ্বের মতো মোড়কের সামনে পাঠযোগ্যভাবে লেভেলিং করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া স্বাস্থ্যকর কালার কোড দেয়ার পরামর্শ তাদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি