ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পর্ব-২

নিরিবিলিতে স্বাবলম্বী তোতা মিয়া; ভূমিকা রাখছেন সমাজ সেবায় [ভিডিও]

প্রকাশিত : ২২:১২, ৫ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২৭, ১০ নভেম্বর ২০১৮

খাবারের হোটেলে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা হোটেল নিরিবিলি। বিগত প্রায় এক যুগ সময়ে এই নিরিবিলি দিয়েই নিজেকে স্বাবলম্বী করেন হোটেলটির কর্ণধার তোতা মিয়া। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন নিজ এলাকার মানুষের জন্যও। সেইসঙ্গে ভূমিকা রাখছেন স্থানীয় এলাকার সমাজসেবা মূলক কর্মকাণ্ডেও।

কিশোর বয়স থেকেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করতেন তোতা মিয়া। এখানেই শেখেন নানান পদের ভর্তা তৈরির রান্না। ২০০৬ সালে সেই অভিজ্ঞতা ও কৌশলকে পুঁজি করে গোড়াপত্তন করেন হোটেল নিরিবিলির। গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক নয়ন বাজারের অদূরেই নিজ বসত ভিটার উঠানেই যাত্রা আরম্ভ করে নিরিবিলি।

তোতা মিয়ার বিশ্বাস ছিলো ভর্তা দিয়ে শুরু করলে চলবে এই হোটেল। কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূরে। সেই বিশ্বাসেই বহুদূর এগিয়ে গেলেন তোতা মিয়া। প্রথমে ৪০ রকমের ভর্তা দিয়ে শুরু করা হোটেল নিরিবিলি এখন ৭০ পদের ভর্তার জন্য এক প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড।

তোতা মিয়ার ভাষায়, “প্রথমে চাকরি করে অভিজ্ঞতা নিছি। লাবনী পয়েন্টের একটি হোটেল কাজ করছি। আমি দ্যাখলাম সেখানে মানুষ ভর্তা খায়। তাই মনে হইতো যে, ভর্তা দিয়ে শুরু করলে চলবে। তবে প্রথমে বাসায় রান্না করা ভাত বাজারে নিয়া বেচতাম। তারপর এখানে (বর্তমান হোটেলের স্থান) শুরু করছি”।

এর পাশাপাশি হোটেলে আসা অতিথিদের বেশ যত্ন করে আপ্যায়ন করেন তোতা মিয়া। আর এটিকেই তার ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি মনে করেন তিনি। ইটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, “আমার হোটেলে যারা আসেন আমি তাদের যত্ন করি। অনেক দূরের থেকে অনেকেই আসেন। অনেকেই আমার এবং আমাদের হোটেলের অন্যান্য কর্মচারিদের ব্যবহারে সন্তোষ জানান। আমার মনে হয়, মানুষের ব্যবহার দিয়ে মন জয় করা যায়। আমার খাবার যদি কারও কারও ভালো নাও লাগে আমার ব্যবহার যেন ভালো লাগে”। তোতা মিয়ার কথার তাতক্ষণিক প্রতিফলন পাওয়া যায় হোটেলে আসা এক অতিথির মুখেও। ঢাকার মিরপুর থেকে হোটেল নিরিবিলিতে ৭০ পদের ভর্তা খেতে যান একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিপনন কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার আরবি। তিনি বলেন, “এতদূর থেকে আসার আগে একটু সন্দেহ ছিলো যে এখানকার রান্না আসলেই কেমন। তবে খাওয়ার পর ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়, তিনি যেমন অতিথিদের যত্ন করেন তেমন যত্ন করে রান্নাও করেন। তাই খাবার সুস্বাদু হয়”।

দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন ধরণের মানুষের পাশাপাশি নামিদামি লোকজন আসেন তোতা মিয়ার হোটেল নিরিবিলিতে। আর এই বিষয়টিকে বেশ উপভোগ করেন তিনি। হাস্যোজ্বল মুখে তিনি বলেন, “আমার হোটেলে রাষ্ট্রপতি (আমদুল হামিদ) তাঁর স্ত্রী নিয়ে খেতে আইছিলো। অনেক মানুষ আসে। কিছুদিন আগে ইরান থেকে দুই আলেম আসছিলেন। আমার খুব ভালো লাগে”।

হোটেল নিরিবিলিতে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলটির নানারকম কাজের জন্য নিয়োজিত আছেন প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন নারী। এছাড়াও আছেন পাঁচজন পুরুষ কর্মচারি। এদের সবার সঙ্গে মিলে কাজ করেন তোতা মিয়া নিজে, তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।

নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি তোতা মিয়া জড়িত আছেন সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে। এলাকার আশেপাশের লোকজনকে সাধ্যমত সাহায্য তো করেনই সেইসঙ্গে নিয়মিত দান করেন স্থানীয় স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, খেলাধুলা এবং সামাজিক সংগঠনগুলোতে।

খেলাধুলার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা কাজ করে তোতা মিয়ার। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন টোক সূর্যবেলা স্পোর্টিং ক্লাব। তিনি বলেন, “আমার ফুটবল খেলতে ভালো লাগতো। কিন্তু নিজে তো খেলতে পারি নাই। তাই আমি চাই অন্যেরা খেলুক”। পাশাপাশি তোতা মিয়া নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতা করেন স্থানীয় টোকশহর সূর্যবেলা স্কুলের নারী ফুটবল টিমের। এই স্কুলের মেয়েরা গাজীপুর জেলার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হবে এমন স্বপ্ন দেখেন তিনি। এছাড়াও এই স্কুলসহ স্থানীয় আইডিয়াল স্কুলে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন ছাত্রীর পড়াশোনার খরচও বহন করেন তোতা মিয়া।        

স্থানীয় টোক নয়ন বাজারের চা বিক্রেতা আজগর আলী। তার মেয়ে আমেনা খাতুন পড়েন টোকশহর সূর্যবেলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে। আজগর আলী জানান, আমেনা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না তার। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পরলে ভর্তি ফি দেন তোতা মিয়া।

তবে এতকিছুর পরেও নিজের অনাড়ম্বর জীবনযাপনেই খুশি তোতা মিয়া। এক হোটেল নিরিবিলি দিয়েই কাটিয়ে দিতে চান বাকিটা জীবন। এই হোটেলের কোন শাখাও খুলতে চাননা তিনি। এলাকায় জনপ্রিয়তা থাকলেও অংশ নিতে চাননা কোন ধরণের নির্বাচনে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি এই এক হোটেলই কুলায়া উঠতে পারি না। কখনও ভাবি নাই যে, এটার আর কোন শাখা করতে হইবো। কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে একদল ব্যবসায়ী আইছিলো। তারা বললো আমাকে কলকাতায় যেতে। এটার শাখা খুলবে। আমি ভর্তা বানানোর রেসিপি বলে দিছি। আমি কলকাতা যাইতে পারুম না। আর আমি কোন নির্বাচনও করতে চাই না। এমনেই ভালো আছি। আমার আগে কিছু ছিলো না। এখন অল্প কিছু হইছে। সবাইকে নিয়ে থাকতে চাই। মানুষের সেবা করতে গেলে নির্বাচন করা লাগে না’।

ভিডিওটি ফেসবুকে দেখতে ক্লিক করুন এখানে। 

আরও পড়ুন: 

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি