যাত্রাবাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ সেই ট্রান্সফরমারে আবারও সংযোগ
কোন দূর্ঘটনার দায় নেবে না ডিপিডিসি
প্রকাশিত : ০৭:০৬ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
রাজধানীর যাত্রাবাড়ির একটি বহুতল ভবনের সামনে বিপজ্জনকভাবে বসানো ট্রান্সফরমারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ড্রিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ট্রান্সফরমারটি ওই ভবনের বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক হওয়ায় এবং তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায় কি-না তা পর্যালোচনা করতে গত জুন মাসে এর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি। তবে আজ সোমবার ট্রান্সফরমারটিকে অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে না সরিয়ে পুনরায় সেটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসের শুরুর দিকে যাত্রাবাড়ির ধলপুর এলাকার ৮৯/৭ হোল্ডিং নম্বরের ভবনের সামনে ট্রান্সফরমারটি বসায় ডিপিডিসি। ভবনটির দেয়াল ঘেঁষে ট্রান্সফরমারটি এমনভাবে বসানো হয় যে, ভবনের বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়েছি ছোঁয়া যায় সেটি। ফলে ভবনে থাকা পাঁচটি পরিবার আতংক নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। বিশেষ করে এসব পরিবারে থাকা শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা হুমকিতে পরে।
সেসময় গত ১৯ জুন একুশে টিভি অনলাইনে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে টনক (হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় ট্রান্সফরমার) নড়ে ডিপিডিসি কর্তাদের। এর দুই দিন পর ২২ জুন তারিখে ট্রান্সফরমারটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। সে বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করে একুশে টিভি অনলাইন (সংবাদ প্রকাশের পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন ট্রান্সফরমার)। সেসময় ডিপিডিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে, ট্রান্সফরমারটিকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যায় কী না সে বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখবেন তারা। আর তার আগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নই থাকবে ট্রান্সফরমারের সংযোগ।
ছবিঃ গত ২২ জুন ট্রান্সফরমারটির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ডিপিডিসি কর্মীরা।
কিন্তু আজ ৮ অক্টোবর একই বিপজ্জনক স্থানে থাকা ট্রান্সফরমারটিতে স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় ডিপিডিসি। এতে করে ভবনটিতে থাকা বাসিন্দারা নতুন করে নিরাপত্তায়হীনতায় ভুগছেন।
ভবনটির মালিক আলমগীর খান বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন যে, স্থানীয় কিছু লোকজনের প্রভাবে তারই ভবনের সামনে ট্রান্সফরমার বসিয়েছে ডিপিডিসি। তিনি বলেন, “আমার ভবন রাজউকের সব নিয়ম মেনেই তৈরি করেছি। এমনকি সড়ক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রেখেই ভবন নির্মাণ করেছি। কিন্তু এখানের সড়কগুলো সরু। তাই অন্যান্য ভবন মালিকেরা যোগসাজোশ করে আমার ভবনের সামনেই এই ট্রান্সফরমার বসিয়েছে”।
তিনি আরও বলেন, “প্রথমে কয়েক দফা অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হয়নি। এরপর একুশে টিভি অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো ট্রান্সফরমারটির। আমরা ভাবছিলাম যে, হয়তো এটি সরেই যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। এ বিষয়ে এখন আমরা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করার আইনগত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি”।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ট্রান্সফরমার বসানোর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল আলম। একুশে টিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, “আমরা সব নিয়ম মেনেই এখানে ট্রান্সফরমার বসিয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং এলাকার কমিশনার আমাদেরকে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন যেন, আমরা এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেই। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই ট্রান্সফরমারটি চালু করা হয়েছে। সেখানে ট্রান্সফরমার দরকার। এ বিষয়টি ডিপিডিসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্যারও জানেন”।
এসময় তিনি ভবন নির্মাণে ভবন মালিকের গাফিলতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ট্রান্সফরমারটি ভবনের কাছে আছে মানে ভবনটির মালিক সড়কের দিকে তার ভবনের সম্প্রসারণ করেছেন। রাজউকের নিয়ম মেনে করলে ট্রান্সফরমার এতো কাছে থাকতো না। আমরা সব আইন মেনেই ট্রান্সফরমার বসিয়েছি। এখন তিনি যদি ভবন সম্প্রসারণ করেন তার দায়ভার তো ওনার”।
কোন দূর্ঘটনা হলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিপিডিসির এই কর্মকর্তা বলেন, “দূর্ঘটনার তো প্রশ্ন আসে না। উনি (ভবন মালিক) যদি ইচ্ছা করে কোণ দূর্ঘটনা ঘটানে চায় তাহলে উনিই দায়ী থাকবেন। আমি আমার সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সফরমার বসিয়েছি। সুতরাং এখানে আর দূর্ঘটনা ঘটবে কেন? আর দূর্ঘটনা তো দূর্ঘটনাই। যেকোন সময় ঘটতে পারে। কিন্তু দূর্ঘটনা ঘটার মতো কারণ এখানে নাই। দূর্ঘটনা না ঘটনার জন্য যে দূরত্ব থাকার কথা তা এখানে আছে”।
এ সংক্রান্ত আরো খবর
//এস এইচ এস// এআর